সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করার ৭টি টিপস

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। জীবনের একটা বড় অংশ হলো শিক্ষাজীবন। এবং শিক্ষাজীবনটাই হচ্ছে জীবনের সবথেকে বেশি গুরুত্বপুর্ণ সময়। এই সময়ে একজন মানুষ যেভাবে তার সময়কে কাজে লাগাবে পরবর্তী সময়ে সে তেমনি ফল পাবে।

শিক্ষাজীবনের মূল ভিত্তিই হচ্ছে পড়াশোনা। আর তাই রাতদিন বাবা – মা বলেন “বেশি করে পড়াশোনা করো এবার ভালো রেজাল্ট করতে হবে”। আর আমরাও সেই প্রেক্ষিতে নাকমুখ গুজে ডুবে থাকি বইয়ের পাতায়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেক পড়ার পড়েও ভালো ফলাফল হচ্ছে না।

অথচ পাশের বাসার ছেলেটা সারাদিন খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকার পরও পরীক্ষায় অনেক ভালো রেজাল্ট করছে। তাই অনেকেই ধারণা করে থাকেন শুধু মেধার তারতম্যের কারণে বোধায় এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষ্যে স্রষ্টা সবাইকে সমান মেধা দিয়ে পাঠিয়েছেন, কিন্তু মেধার সঠিক ব্যবহারই উপরই ফার্স্ট বয় আর লাস্ট বয়ের ব্যবধান তৈরী হয়।

সমাজে একটি প্রচলিত ধারনা আছ যে , “স্টাডি হার্ড” অর্থাৎ “বেশি বেশি পড়লে ফল ভালো হবে” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে “স্টাডি স্মার্ট” বা “সঠিক নিয়মে পড়াশোনা” করাটাই বেশি কার্যকর।

দৈনন্দিন জীবনে পড়াশোনার পদ্ধতিতে ছোট্ট ছোট্ট কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে কম পড়াশোনা করেও ভালো রেজাল্ট করা পসিবল। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করার ৭ টি টিপস

পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম

সংস্কৃত ভাষায় একটা কথা আছে ছাত্র নং অধ্যয় নং তপঃ । অধ্যয়নই ছাত্র জীবনের একমাত্র তপস্যা। তবে সঠিক নিয়ম মেনে পড়াশোনা করলে অল্প পড়েও ভালো রেজাল্ট করা পসিবল। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করার ৭টি টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

১। একনাগাড়ে বেশিক্ষণ পড়াশোনা না করা

আমদের মস্তিকের তথ্য ধারণ ক্ষমতা টান্স ২৫-৩০ মিনিট পরিশ্রম করার পরে থেকে হ্রস পেতে শুরু করে। সুতারাং, একটানা এক ঘন্টার বেশি সময় বই নিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকলে সেটা বন্ধ করতে হবে। পড়ার সময়গুলোকে ছোট্ট ছোট্ট ভাগে আলাদা করে সাজিয়ে পড়তে হবে।

প্রতেকটা ভাগ শেষ হবার পরে পাঁচ মিনিটের একটা করে ব্রেক নিয়ে হবে। এই সময়ে আপনার যেটা ভালো লাগবে সেটা করবেন। অতঃপর আবার পড়াশোনা শুরু করবেন।

২।বুঝে পড়া

ছোট বেলা থেকেই আমাদেরকে কবিতা, ছড়া প্রভৃতি দাঁড়িকাম সহ মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষার খাতাতে লিখতে লিখতে পরবর্তীতে সবকিছুই মুখস্থ করার একটা প্রবনতা অটোমেটিক সৃষ্ট হয়ে যায়। আর এটি খুব ভুল একটি পদ্ধতি।

আনেকেই আছে যাদের কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার হলে সে হুবুহু বই এর সংজ্ঞা গড়গড় করে বলে দিতে পারে কিন্তু ব্যাখ্যা করতে বললেই সে নিশ্চুপ হয়ে যায়। বর্তমানে পরীক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি।
সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করার ৭টি টিপস

আর তাই সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিতে মুখস্থবিদ্যা একদমই সাহায্য করতে পারবে না কাঙ্খিত ফলাফল এনে দিতে। সুতারাং হুবাহু বই মুখস্থ না করে মূল টপিকটা বুঝতে চেষ্টা করাটা বেশি উত্তম। কেননা, মুখস্থ দশবার করলে দশবারই ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু একবার কোন টপিক ভালো করে বুঝতে পারলে সেটা সারাজীবন মনে থাকবে।

৩। অনেকগুলো সোর্স থেকে পড়া

কোন টপিক বুঝে বুঝে পড়ার একটি চমৎকার উপায় হচ্ছে একই টপিক অনেকগুলো সোর্স থেকে পড়া। শুধুমাত্র বই থেকে পড়ার বিষয়টা বর্তমানে অন্ধ হাতির গল্পের ন্যায়। শুধু বই দেখে পড়তে গেলে অনেক কিছুই মিস হয়ে যায়।

তাই গ্রুপ স্টাডি করে বা ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে পড়লে সেই টপিকটি আরো বেশি ভালো করে রপ্ত করা যায়। এছাড়াও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে অসংখ্য সমাধান পাওয়া যায় ফেসবুক ইউটিউব অনেক অনেক শিখনীয় ওয়েবসাইট গুলা তে।

৪। অন্যকে শেখানো

বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, “একটি বিষয় তোমার পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত হবে তখনই, যখন বিষয়টি তুমি অন্য কাউকে বুঝাতে পারবে।” তাই কোন কিছু পড়ার পরে অন্যকে বোঝানোর চেষ্টা করাটা হলো পড়াটা চিরস্থাইয়ী মনে রাখার অন্যতম কৌশল।

আর অন্যকে বুঝাতে গেলে শুধু বইয়ে যেটা পড়া হয়েছে ঐটুকুই বোঝানো হবে না সেই সাথে আরো অনেক কিছুই বোঝাতে হবে। আর এর প্রেক্ষিতে উক্ত টপিক সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট জ্ঞান রপ্ত হবে।

৫। নিবিড় মনোবিবেশ

স্মার্ট স্টাডি এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যেটুকু সময় পড়া সেটা মনোযোগের সাথে পড়া। অধিকাংশ ছাত্রই আছে যারা দিনের অনেকটা সময় বইয়ের সামনে বসে থাকে, কিন্তু অখন্ড মনোযোগ দিয়ে খুবই অল্প সময় পড়াশোনা করে। এর ঠিক এই কারনেই বাহ্যিক ভাবে সারাদিন পড়াশোনা করেও আশা অনুরুপ রেজাল্ট হয় না।

কারন মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ না করলে কখনই সেটাতে ভাল কিছু করা যায় না। তাই যখন পড়তে বসা হবে তখন সম্পুর্ণ মনোযোগ থাকবে বইয়ের পাতায়। মনোযোগ বিঘ্ন করার করার জন্য যা কিছু আছে তার সবকিছুই রাখতে হবে হাতের নাগাল থেকে অনেক দূরে। অল্প সময় পড়লেও সেটা ১০০% মনোযোগ দিয়েই পড়তে হবে। আর বিনোদনের জন্য থেকে মাঝখানে মাঝখানে ৫ মিনিটের ব্রেক থাকবেই।

৬। ছোট ছোট লক্ষ্য অনুযায়ী পড়া

বছরের শুরুতে সকল ছাত্রই তারা লক্ষ্য ঠিক করে, “এই বছরে অনেক পড়াশোনা করবে”। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই সেই লক্ষ্য থেকে সড়ে যায়। কাজেই লক্ষ্যটা অকার্যকরই রয়ে যায়। কথায় আছে, “এক লাফে যেমন গাছে উঠা জায় না” তেমনি লক্ষ্য একবছরের জন্য করলে সেটা বাস্তবায়ন করা যায় না। 

তাই সারাবছরের জন্য লক্ষ্য ঠিক না করে আগে ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। সেই সাথে লক্ষ্য অনুযায়ী আগাতে হবে। যখন ছোট ছোট লক্ষ্যগুলো সফল হবে তখন বড় লক্ষ্য গুলো অটোমেটিক সফল হবে।

৭। পড়াশোনা হোক গল্পের, আনন্দের

কম বেশি আমরা সবাই গল্প শুনতে ভালবাসি । আমদের গুরুজনেরা বাল্যকালে আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখতে অনেক গল্প বলেছেন যেগুলো আমরা আজও দিব্যি মনে রেখেছি । কিন্তু পূর্বের ক্লাশে স্যার কি পড়িয়েছেন সেটাই ভুলে গেছি।

আর এর কারনটা হলো গল্প গুলো আমাদের মনকে আনন্দ প্রদান করে এবং আমাদের স্মৃতিতে গেথে থাকে। তাই কোন গল্প কয়েক বছর পুরনো হলেও সেটা মনে রাখতে সক্ষম হই। তাই পড়াশোনাটাও যদি গল্পের ছলে আনন্দ নিয়ে করা যায় তাহলে অল্প পরিমাণ পড়াশোনা করেও ভালো ফলাফল করা সম্ভব।

পরিশিষ্ট

পড়াশোনা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই জীবনের এই অবিচ্ছেদ্য অংশটির যথাযথ ব্যবহার করে জীবনকে সুন্দর করা পসিবল। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করার ৭ টি উপায় কি কি বলা হয়েছে।

এবং উক্ত ৭ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ও করা হয়েছে। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন কিভাবে উপোরক্ত ৭ টি উপায় ফলো করে অল্প পড়াশোনার দ্বারাও ভালো রাজাল্ট করা সম্ভব। সবাই ভালো থাকবেন আজ এই প্রর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম।

Comments

Popular posts from this blog

এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার নাম্বার, ঠিকানা ও ভাড়ার তালিকা

সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের নাম [আপডেট ২০২৩]

বাংলাদেশের খেলা দেখার টিভি চ্যানেল লিস্ট ২০২৩