পরীক্ষার হলে যে ছয়টি কাজ কখনোই করবেন না

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। সবাই কেমন আছেন। “ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না থাকে পরীক্ষা” এই কথাটির আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। পরীক্ষা হলো ছাত্রজীবনের এমন একটি বিষয় যেটা নিয়ে সবার মাঝেই একটা ভয়ভীতি কাজ করে।

খারাপ স্টুডেন্ট হোক আর ভালো স্টুডেন্ট সবার কাছেই ভয়ের জিনিসটি হলো পরীক্ষা। পরীক্ষার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই একটা দুশ্চিন্তা কাজ করতে থাকে মনের ভিতরে। আর এই ভয়টা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় যখন আমরা পরীক্ষার হলে যাই।

আর এই জন্যই অনেক সময় পরিক্ষায় অনেক জানা জিনিস ও ভুল করে রেখে আছি । আর ঠিক এই ভুলোগুলো জেনো আর না হয় সেই বিষয় এই বিস্তারিত বলবো আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। এছাড়া জানানোর ট্রাই করবো পরীক্ষার হলে কি কি করনীয়, সেই সাথে পরীক্ষার আগের রাতের প্রস্ততি কেমন হবে, পরীক্ষার হলো কোন দোয়া আছে নাকি ইত্যাদি বিষয়। তো চলুন বন্ধুরা আর দেরি না করে চলে যাই “পরীক্ষার হলে যে ছয়টি কাজ কখনোই করবেন না” এই বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনায়।

পরীক্ষার হলে করা ছয়টি ভূল কাজ

কমবেশী আমরা সকলেই জীবনে অনেক বার পরীক্ষার সম্মুখিন হয়েছি। আর প্রত্যকবারই আমরা অনেকেই না জেনে অনেক ভুল কাজ করে এসেছি। যার দরুন অনেক ভালো প্রিপারেশন থাকে স্বত্ত্বেও অনেক সময় আমরা আশা অনুরুপ রেজাল্ট পাই নি। এমনই ছয়টি ভুল কাজ গুলো হলোঃ

১। পুরো প্রশ্নটা সঠিকভাবে না পড়া

আমরা অনেকেই কমন একটা ভুল কাজ করে ফেলি তা হলো পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র হাতে পাবার সাথে সাথেই প্রশ্নটা ভালো করে না পড়েই লিখা শুরু করে দিই। কিন্তু এটা একটি চুড়ান্ত রকমের ভুল কাজ। কারন প্রশ্নটা যদি আগে ভাল করে না পড়া হয় তাহলে সঠিক উত্তর লিখা কঠিন হয়ে যায়।

পরীক্ষার হলে যে ছয়টি কাজ কখনোই করবেন না

অনেকেই প্রশ্ন টা ভালো করে না পড়েই লিখতে গিয়ে সঠিক উত্তর লিখার পরিবর্তে উলটা পালটা উত্তর লিখে দিয়ে চলে আসে। তাই সঠিক কাজ হচ্ছে প্রশ্ন টা হাতে পাবার পরে প্রথমে সেটা খুব ভাল করে দুই বার পড়ে শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ে ফেলা। অতঃপর যে প্রশ্নটা সবচেয়ে সোজা মনে হয় বিসমিল্লাহ বলে সেটা লিখা শুরু করা।

২। প্রশ্নের মান বণ্টন না দেখা

প্রত্যেকটা প্রশ্নেরই তিন/চার রকমের মান বণ্টন হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কিছু অতি সংক্ষিপ্ত থাকে কিছু সংক্ষিপ্ত আর কিছু মাঝারি প্রশ্ন থাকে। আর এই ক্যাটাগরির প্রত্যেকটার মান ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু পরীক্ষার হলে অনেকেই প্রশ্নের মানবন্টন না দেখেই লিখা শুরু করে দিই।

আর প্রেক্ষিতে অনেক সময়ই যে প্রশ্নের বেশি সেটার থেকে কম মানের প্রশ্নের উওরের সাইজ বড় করে ফেলি। তাই সবসময় প্রশ্নের মানবণ্টন খেয়াল রেখে প্রশ্নের উত্তর লেখা উচিৎ।

৩। বেশি ফাকা ফাকা করে লেখা

আমরা অনেকেই মনে রাখি যতবেশি পেজ/লুজশীট নেওয়া যাবে পরীক্ষার নাম্বার ও ততবেশি পাওয়া যাবে। আর এই চিন্তার প্রেক্ষিতে পরীক্ষার খাতায় অনেক ফাকা ফাকা করে লিখে থাকি। কিন্তু বিষয়টি সম্পুর্ণ ভুল চিন্তা। কারন লিখার গুণগত মানের উপর সর্বদা নাম্বার নির্ভর করে। যার লিখার গুনগত মান ভালো সেই সর্বচ্চ নাম্বারের অধিকারী হবে।

আর সেই সাথে বেশি ফাকা করে লিখে খাতার পৃষ্ঠা বৃদ্ধি করলে যে শিক্ষক খাতা দেখবেন তিনিও বিরক্তিবোধ করেন। তবে ঘিজিবিজি করে লিখাও কখনো ঠিক না। এটা করলেও যে শিক্ষক খাতা দেখবেন তিনি কিছু বুঝতেই পারবেন না । এতে আপনি দিনশেষে নাম্বার কম পাবেন । তাই পরীক্ষার হলে অবশ্যই বেশি ফাকা ফাকা করে না লিখে পরিমিত পরিমাণ ফাকা রাখে লিখতে হবে। এতে যেমন খাতার সুন্দর্য বৃদ্ধি পায় তেমনি যিনি খাতে দেখবেন তার ও অনেক সুবিধা হয়।

৪। সময়কে গুরুত্ব না দেওয়া

পরীক্ষার হলে সবচেয়ে বেশি যে ভূলটি করা হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি ভুল হলো সময়কে গুরুত্ব না দেওয়া। আর প্রেক্ষিতে অধিকাংশই সকল প্রশ্নের উত্তর লিখে আসতে পারে না। আর সবগুলোর উত্তর দিতে পারলেও শেষেও প্রশ্নগুলোর উত্তর একদম ছোট সাইজের হয়ে যায়। তাই সর্বদাই পরীক্ষার হলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সাথে সবচেয়ে উত্তম হয় প্রশ্নপত্র পাবার পরেই প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সময় নির্ধারন করে লিখা শুরু করা।

৫। সম্পূর্ন খাতা রিভাইজ না দেওয়া

আমদের মধ্যকার অনেকেরই একটা কমন স্বভাব হলো পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নগুলো লিখা শেষ হওয়া মাত্রই সেটা জমা দিয়ে হল ত্যাগ করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষা শেষ হলে অবশ্যই খাতা প্রথম থেকে শেষ অব্দি অন্তত ১ বার সুন্দর করে রিভাইজ দেওয়া।

কারন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা লাস্টের দিকে সময় স্বল্পতার কারনে আমরা প্রশ্নের নাম্বার উল্টাপাল্টা করে লিখে রেখেছি, এছাড়াও দেখা যায় একই প্রশ্নের উত্তর দুইবার লিখে রেখেছি। এমনকি প্রশ্নের উত্তর বেশি লিখে রেখে দিয়েছি। এই আমাদের ছোট ছোট ভুল এই ভুল গুলোর কারনে আমাদের পুরা নাম্বার টা ই কাটা যায়। তাই অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েও রেজাল্ট খারাপ আসে। তাই পরীক্ষার শেষে হল থেকে বের হবার পুর্বে অবশ্যই পুরা খাতা অন্তত একবার হলেও রিভাইজ দেওয়া উচিৎ।

৬। নকল করা

বর্তমান সময়ে পরীক্ষার হলের একটা কমন সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে হলো নকল করা। অনেক স্টুডেন্ট ই আছে যারা নকল করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নকল করাটা হলো একটি অপরাধ। আর নকল বলতে যে পকেটে করে কাগজে লিখে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার হলে সেটা দেখে খাতায় লিখা তা নয় অন্যের খাতা দেখে লেখাও এক প্রকার নকল।

পরীক্ষা শুধুমাত্র যে আপনার রেজল্ট প্রদান করে তা না পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার যোগ্যতা যাচাই করা হয়। তাই নকল করে আপনি পাস/ভালো রেজাল্ট করতে পারলেও আপনি কিন্তু জীবনে ঠিকই পিছিয়ে গেলেন। আর এছড়া ও ত ধরা পড়লে যেটা হবে সেটার কথা বাদই রাখলাম।

আর সবচেয়ে বড়কথা আপনি একটি নকল যে সময় টুকু ব্যয় করে বানাবেন সেই সময় ওই প্রশ্নটা পড়লেও পরীক্ষার খাতায় অন্তত প্রশ্নটার ৪০% লিখতে পারবেন। তাই পরীক্ষার হলে কোন প্রকারে নকল না করে সৎ ভাবে পরীক্ষা দেয়া উচিৎ।

এছাড়াও আরো কিছু করণীয় বিষয় আছে। যেমনঃ পরীক্ষার হলে খাতা পাবার পুর্বে প্রথমেই খাতার সকল পৃষ্ঠা গুলো দেখা উচিৎ খাতার সেলাই ঠিক আছে কিনা দেখা উচিৎ । তারপর এডমিট কার্ড দেখে ধীরে সুস্থে নাম রোল রেজিস্ট্রেশন বিষয়কোড ইত্যাদি পূরণ করা। কোনটা না বুঝলে আন্দাজে কিছু না করে দায়িত্বরত শিক্ষকের নিকট থেকে পরামর্শ নেওয়া।

একটা প্রশ্নের উত্তর লিখার পরে একটু ফাকা রেখে অন্য প্রশ্ন লিখা শুরু করা। সহজ প্রশ্নগুলো আগে লিখার চেষ্টা করা। পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দেওয়া। পরীক্ষার সময় কোন প্রশ্নের উত্তর না মনে পড়লে প্রশ্নটি বারবার পড়া। সেই সাথে পরীক্ষার হলে “রব্বি জিদনি ইলমা” এই দোয়া বেশি বেশি পড়া ইত্যাদি।

পরিশিষ্ট

ছাত্রেজীবনের একটা গুরুত্বপুর্ণ অংশ হলো পরীক্ষা। আমরা হয়তো সবাই কমবেশি পরীক্ষার হলে কি কি কাজ করতে হয় এবং কি কি কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। তারপর ও আমরা অনেকেই পরীক্ষার হলে ছয়টি ভুল করে ফেলি।

আর তাই আজকে আপনাদের পরীক্ষার হলের ভুলগুলো আবার একটু মনে করিয়ে দিলাম। আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন । আজকে এই প্রর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ আসসালামু আলাইকুম।

Comments

Popular posts from this blog

এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার নাম্বার, ঠিকানা ও ভাড়ার তালিকা

সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের নাম [আপডেট ২০২৩]

বাংলাদেশের খেলা দেখার টিভি চ্যানেল লিস্ট ২০২৩